কুরবানির চেতনায় জাগ্রত হোক মুমিনের ঘুমন্ত বিবেক

কুরবানির চেতনায় জাগ্রত হোক মুমিনের ঘুমন্ত বিবেক

যুব কলাম

কুরবানি মুসলিম উম্মাহর একটি প্রতীকী ইবাদত। বান্দা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান ও প্রিয় বস্তুটি উৎসর্গ করার একটি অনুশীলনের নাম কুরবানি। পার্থিব জগতে নিজের সকল ইচ্ছাকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পরিত্যাগ করার নাম কুরবানি। আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক জীবনে শয়তানের সকল প্ররোচনা উপেক্ষা করে শতভাগ ইসলামী অনুশাসন অনুযায়ী পরিচালিত হওয়ার কঠিন সংকল্পের মহৎ সাধনার নাম কুরবানি।

হযরত ইবরাহিম আ.-এর সুন্নাহকে ধারণ করে ইসলামের ওপর অটল-অবিচল থাকতে গিয়ে সকল দুঃখ ও মসিবতে দীনের পথে অবিচল থাকাই বড়দের কুরবানি। হযরত ইসমাঈল আ. -এর মতো বাবা-মায়ের নির্দেশ মান্য করে মহান আল্লাহর রাহে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের সবক নেয়াটাই প্রত্যেক শিশুর কুরবানি। হযরত হাজেরা আ.-এর মতো দুনিয়ার সকল কষ্টকে সহ্য করে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিবেদিত হয়ে, নিজ স্বামী, সন্তান ও পরিবারকে দীনের পথে চলার অনুপ্রেরণা তৈরির চূড়ান্ত মেহনতি হওয়ার সবক নেয়ার নাম প্রত্যেক নারীর কুরবানি।

কুরবানি সকল আল্লাহদ্রোহী, বস্তুবাদী, কায়েমি স্বার্থবাদীদের বিরুদ্ধে একটি অপ্রতিরোধ্য সফল সংগ্রামের নাম। হযরত ইসমাঈল আ. কে কুরবানি দেয়ার জন্য নিয়ে যাওয়ার পথে তিনবার তিনি শয়তানী প্ররোচনার সম্মুখীন হয়েছিলেন। কিশোর অবস্থায় নিজের জীবন বিপন্ন হওয়ার সংবাদ নিশ্চিত হওয়ার পরও অভিশপ্ত শয়তানকে তিন তিনবার পাথর নিক্ষেপ করে শয়তানের সকল চক্রান্তের জাল ছিন্ন করে দিয়েছিলেন।

জীবন যুদ্ধের প্রতিটি পদে শয়তানের নানামুখী আগ্রাসনে আমরা আজ জর্জরিত। জামারায় পাথর নিক্ষেপের যে নির্দেশ রয়েছে আমাদের জন্য, তার তাৎপর্য কী? যারা হজ সম্পাদনের পর দেশে এসে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণে মত্তমাতাল থাকেন বা ইসলামের বিধিবিধান পালনে শৈথিল্য প্রদর্শন করেন, অথবা আরও একধাপ এগিয়ে ইয়াহুদি-খ্রিস্টান ও নাস্তিক্যবাদীদের সাথে আঁতাত করে ইসলাম ধ্বংসের মিশনে তৎপর হন, তাদের পাথর নিক্ষেপের নাটকীয়তা খুবই হাস্যকর। হাজার হাজার টাকা দিয়ে কুরবানি করলাম, অনেক কষ্ট সহ্য করে পবিত্র হজ আদায় করলাম কিন্তু মূল উদ্দেশ্য ও চেতনাশক্তিকে শাণিত করলাম না, তবে এসব লৌকিকতার প্রয়োজন কী?

বান্দার ইবাদত হবে একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। এই ইবাদত হবে প্রেমের মাধ্যমে। আশেক এবং মাশুকের মিলন পথে যেসব সৃষ্টির মোহ, মায়া প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয় ভেঙে চুরে প্রকৃত আশেকের পরিচয় দেয়াই কুরবানি ও হজের মৌলিক চেতনা। “আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য” এই দ্বীপ্তঘোষণায় যে বান্দা নড়বড়ে সে আবার কিসের মুসলমান? ব্যক্তিগত জীবনে আমলহীন, পারিবারিক জীবনে তথাকথিত আধুনিক, ব্যবসায় হারাম পদ্ধতি, রাজনীতিতে চরম বস্তুবাদী এটাই যদি পরিচয় হয়, তাহলে পশু কুরবানি ও কসাইখানার সাধারণ পশু যবেহের মধ্যে পার্থক্য থাকলো কই?

কুরবানিতো ঐ ব্যক্তির জন্য যে সকল সিদ্ধান্তে মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সা. এর হুকুমের কাছে মাথা নত করে। নিজের পশুত্ব, নীচতা, স্বার্থপরতা, আমিত্ব ও অহংকারকে ধুয়ে-মুছে পরিশুদ্ধ অন্তর নিয়ে ইবরাহীমি সুন্নাত পালনের নিয়তে পশু যবেহ করে। এই চেতনা শুধু তিনদিনের জন্য নয়, আমৃত্যু।

তাই এই ঈদুল আজহায় সকল লৌকিকতা মুছে যাক। মুসলিম উম্মাহ ইবরাহিমী ঈমান ও ইসমাঈলী আত্মত্যাগের লুপ্ত চেতনায় উদ্ভাসিত হোক। শয়তানের জাল ছিন্ন করে ঈমানী চেতনায় জাগ্রত হোক মুমিনের ঘুমন্ত বিবেক।