বিজ্ঞানে মুসলমান

বিজ্ঞানে মুসলমান

যুব কলাম

মাওলানা মুহাম্মাদ আল আমিন সোহাগ


মহান ঐশী গ্রন্থ আল কুরআনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অনুপ্রেরণায় মুসলমানরা বিজ্ঞানের সকল শাখায় জ্ঞান চর্চায় আত্মনিয়োগ করে ইতিহাসে অবদান রাখতে সক্ষম হন। যেমন:
يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ أَخْبَارَهَا ঙ بِأَنَّ رَبَّكَ أَوْحَى لَهَا
একদিন সব কিছুই প্রকাশিত হয়ে পড়বে তোমার প্রতিপালকের আদেশ অনুযায়ী। (সুরা যিলযাল আয়াত নং ৪-৫)

মানুষ জানত যে কথা বাতাসে হারিয়ে যায় কিন্তু কুরআনের মাধ্যমে পশ্চাত্য প্রথম জানলো যে মানুষের উৎক্ষিপ্ত কথা বাতাসে ভেসে বেড়ায়। এ কারনেই ড. মরিস বুকাইলি তার রচিত বাইবেল কুরআন ও বিজ্ঞানের ১২ পৃষ্ঠায় বলেন “কুরআনের এমন একটা বক্তব্য নাই যে বক্তব্যকে আধুনিক বৈজ্ঞানিক বিচারে খন্ডন করা যেতে পারে”। মুসলিম জাতি তাদের বৈজ্ঞানিক বিপ্লব ঘটিয়েছিল আল কুরআনের বদৌলতে। এটাই মুসলিম জাতির বিজ্ঞান উৎকর্ষ সাধনের মূল প্রাণশক্তি।

এ কারনে Dr. Hartwing Herschfeld তার গবেষনা গ্রন্থ New research in to the composition and exegesis of Quran তিনি লিখেছেনঃ we must not be surprised to find the Quran regarded as the fountain of All the Science.

রসায়নে মুসলমান:
মিশরে প্রথম রসায়ন চর্চা শুরু হয় তারা কাঠ জোড়া দেয়ার জন্য গদ আবিস্কার করেন। গাছের আঠা, গম, আর যব ইত্যাদি দিয়ে তৈরী করল কাগজ। রসায়নের উত্তোরোত্তর সমৃদ্ধি করেছিল মুসলমানদের স্বর্ণযুগে। নবী করীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগ হতে হযরত আলী রাযি. হাত ধরে খালেদ বিন ইয়াজিদের সেতু বন্ধন হয়ে জাফর আস সাদিক এর মাধ্যমে জাবির ইবনে হাইয়ানের হাতে মুসলিম রসায়ন বিজ্ঞানে পূর্ণতা লাভ করে। যখন মিশরীয়রা ও ইউরোপ রসায়ন কে যাদু বিদ্যার প্রতিক মনে করতো। তখন কুফায় হারুন অর রশীদের সময়কালে (৭৮৬-৮০৯) জাবির ইবনে হাইয়ানের গবেষণাগারে সোনা তৈরীর ফরমূলার বাস্তবিক প্রয়োগ করে সোনার তাল উৎপাদন করেছিলেন।

তিনি তার গবেষণাগারে গন্ধক ও পারদ আলাদা ধাতুতে পরিনিত করেন। তার রচিত বিখ্যাত বই ‘‘কিতাবুল ইজহাত’’ এ উল্লেখ করেছেন ধাতু সমূহ পারদ ও গন্ধকের সংমিশ্রন ও সোনালী রংয়ের গন্ধকের সাথে পারদের সংযুত্তি তৈরী হয় সোনা। তার বিখ্যাত রসায়নের গবেষণাগারে সীসা  কে বিজ্ঞান সম্মত প্রক্রিয়া আবিস্কৃত হয়। প্রাচ্য ও পশ্চিমের বিজ্ঞানীদের কাছে তিনি অনুবাদের কারণে  এবনবৎ নামে পরিচিত।

জাবির ইবনে হাইয়ানের আবিস্কার সমূহ:
১. ডিস্টিলেশন পদ্ধতি।
২. তরলীকরণ।
৩. স্ফটি করণ।
৪. শুদ্ধকরণ।
৫. অক্সিজেনের সাথে যুক্তকরণ।
৬. বাষ্পীকরণ।
৭. চোলাই যন্ত্র (এ পদ্ধতিতে তৈরী হচ্ছে গাড় গোলাপজল ও বিভিন্ন সুগন্ধি দ্রব্যাদি)

জাকারিয়া আর রাজি এর হাত ধরে বিজ্ঞানের ইতিহাসে আবিস্কৃত হয় যবক্ষার এসিড। এই যবক্ষার এসিড আবিস্কারের কারণে ইউরোপীয় বিজ্ঞান সমাজে তাকে নির্ভরযোগ্য রসায়নবিদ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। পৃথিবীর সর্বপ্রথম এনসাইক্লোপিডিয়া রচিত হয় ৯৭৬ সালে বিখ্যাত মুসলিম শিক্ষাবিদ আবু আব্দুল্লাহ রচিত ‘‘মাফাতিহুল উলুম’’এর মাধ্যমে।

এ বিশ্বকোষের ২য় খন্ডে আল কেমী অর্থাৎ রসায়ন নিয়ে তিনটি অধ্যায় আলোচনা করা হয়। এ বিশ্বকোষ থেকে আমরা জানতে পারি ইবনে আব্দুল মালেক আল কাছির আবিস্কার রসায়নকে অভূতপূর্ব সাফল্য এনে দিয়েছে। নিন্মে তার আবিস্কারের তালিকা দেয়া হলো।
১. Solution of Sodium Hydrate
২. Solution of Calcium polysulfide
৩. Calcination
৪. দ্রবন পদ্ধতি
৫. কাশা গন্ধক তৈরীর প্রক্রিয়া।
৬. Coagulation অর্থাৎ ঘনীভূত করার পদ্ধতি ইত্যাদি।

চর্তুদশ শতাব্দীতে মুসলমানদের হাত ধরে রসায়ন তার স্বর্ণযুগ অতিবাহিত করে। দশম ও একাদশ শতকে জাবির ও রাজি প্রমুখের রসায়নগার যখন চলছিল তার শত শত বছর পরেও ইউরোপের জিইফ্রি চসার রসায়নের পুতিগন্ধময় কান্ডকারখানা থেকে বাচার জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানাচ্ছিল। মহাকরি দান্তে তো আলকেমীদের তার দেখানো নরকে সপ্তম স্থানে স্থান দিয়েছিলেন। ঐতিহাসিক আমির আলি বলেন: “বিজ্ঞান হিসেবে রসায়ন প্রশ্নাতীত ভাবে মুসলমানদের আবিস্কার ”।

পদার্থ বিজ্ঞানে মুসলমান:
اللَّهُ نُورُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ مَثَلُ نُورِهِ كَمِشْكَاةٍ فِيهَا مِصْبَاحٌ الْمِصْبَاحُ فِي زُجَاجَةٍ الزُّجَاجَةُ كَأَنَّهَا كَوْكَبٌ دُرِّيٌّ يُوقَدُ مِنْ شَجَرَةٍ مُبَارَكَةٍ زَيْتُونَةٍ لَا شَرْقِيَّةٍ وَلَا غَرْبِيَّةٍ يَكَادُ زَيْتُهَا يُضِيءُ وَلَوْ لَمْ تَمْسَسْهُ نَارٌ نُورٌ عَلَى نُورٍ يَهْدِي اللَّهُ لِنُورِهِ مَنْ يَشَاءُ وَيَضْرِبُ اللَّهُ الْأَمْثَالَ لِلنَّاسِ وَاللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
পবিত্র কোরআনের সুরা নূর এর ৩৫ নং  আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা মুসলিম পদার্থবিদ গণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ আয়াতের অনুপ্রেরণায় আলোক বিজ্ঞানের পথ সুগম হয়। ভৌত বিজ্ঞানকে মুসলিম বিজ্ঞানীরা প্রাকৃতিক দর্শনের শিরোনামে আলোচনা করেছে। ইবনে সিনা, তার রচিত ‘‘শিফা ও ফান্না’’  (বৈজ্ঞানিক কৌশল) নামে পদার্থ বিজ্ঞানকে আলোচনা করেছেন।

পদার্থ বিজ্ঞানের একটি শাখা Optical Science এ ইবনুল হাইছামের নাম অবিস্মরণীয়। তিনি তার রচিত কিতাব ‘‘মাকালাতু ফিজজুয়ে” নামক গ্রন্থে আলোর প্রসরণ সম্পর্কে টলেমির ফরমুলার অসারতা প্রমান করেন। তিনি আলোর প্রতিফলন ও প্রতিসরণের নিয়ম আবিস্কার করেন যা বর্তমানে Snell’s law নামে পরিচিত।

এ কারণে J.F Allen বলেন:  Al Hazen could be said to have a 20th  century mind in a 10th century.

ইবনুল হাইছাম এর আবিস্কার তালিকা:
১. হাল্কা স্বচ্ছ মাধ্যম হতে অপেক্ষাকৃত ভারি আর একটি স্বচ্ছ মাধ্যমে প্রবেশ করার সময় আলোর দিক পরিবর্তন হয়।
২. ভারি মাধ্যমের চেয়ে হাল্কা মাধ্যমে আলোর বেগ দ্রুততর হয়।
৩. আলোর অপতন ও প্রতিসরণের পথ
৪. বায়ু মন্ডলের উর্দ্ধসীমা নির্ণয় করেন।
৫. ম্যাগনিফাইং গ্যাস আবিস্কার কারেন।
ইবনে সিনা প্রমাণ করে ছিলেন যে, আলোর গতি শব্দের গতির চেয়ে দ্রুত।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে মুসলমান:
চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রথম উদ্ভাবন হিসেবে ব্যাবিলনকে চিন্তা করা হয়। সৃষ্টির সূচনালগ্ন হতেই মানুষের প্রয়োজনে মানুষ জ্ঞানের এ শাখার প্রতি আকৃষ্ট হন। সভ্যতার চক্রবূহে ইউফ্রেটিস, তাইগ্রিস, মেসোপটেমিয়ার পরে চিকিৎসা বিজ্ঞানে অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়েছে মিশরীয়রা। যুগ বদলের পালাক্রমে এ শাখা মুসলিম সভ্যতার ছোয়া পায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে মুসলমানদের আধ্যাতিক ও প্রায়োগিক চিকিৎসা পূর্বেও সকল সাফল্যতা ছড়িয়ে আজ অবধি মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের জয় জয়কার।

Prof. Brown বলেন: Prophet Muhammad is a tradition familiar all Muslim is said to have linked medicine in importance with theology.

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চিকিৎসা বিজ্ঞানকে ধর্মের সাথে যুক্ত করেছেন। জার্মান পন্ডিত Dr. Karl Qoitzy অকপটে স্বীকার করেছেন যে, কোরআনের ১১৪ সুরার মধ্যে ৯৭ টি সূরার ৩৫৫ টি আয়াত সরাসরি চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাথে সম্পৃক্ত। আর হাদীসের শ্রেষ্ঠতম গ্রন্থ সহীহ বুখারী শরীফে “তিব্বুন নবী” শীর্ষক  অধ্যায়ে ৮০ পরিচ্ছেদ রয়েছে। নবী করীম সা. তার জীবদ্দশায় যুদ্ধকালীন চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন। যেখানে আধুনিক সার্জারী এ সুতিগাড় হিসেবে পরিচিত। খোলাফায়ে রাশেদার যুগে চক্ষু রোগের চিকিৎসা ইতিহাস বিখ্যাত।

আজ মুসলিম স্বর্ণ যুগের বিজ্ঞানীরা যদি অনুবাদ না করতেন তাহলে এই আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান হয়তো আমরা পেতাম না। এনসাইক্লোপেডিয়া অফ ব্রিটেনিকার নিবন্ধনকার আর আর ডাবলিউ মতে, ৭ম শতাব্দীতে মুসলিম চিকিৎসদের মূল অভিযাত্রা শুরু হয়। এ শতাব্দীর খৃষ্টান চিকিৎসা বিজ্ঞানী ইয়াহইয়া আন নাহবী সর্বপ্রথম চিকিৎসা বিজ্ঞানে আরব মুসলমানদের অবদানের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করেন।

জাবির ইবনে হাইয়ান প্রায় ৫০০ টি চিকিৎসা সম্পৃক্ত পুস্তক প্রণয়ন করেন। তিনিই সর্বপ্রথম ব্যাবস্থাপত্রের ইতিবৃত্ত চালু করেন। ইতিহাসে তার রচিত ২২৬ টি ব্যাবস্থাপত্রের সত্যতা পাওয়া যায়।

আলি ইবনে রাব্বানের ‘‘ফিরদাউসূল হিকমাত’’ চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রথম বিশ্বকোষ। The Natural Science and Medicine গ্রন্থকার Martine Pleesner এর ভাষায়: The oldest surviving Arabic Encyclopedia of Medicine The Firdausul-al-Hikmah is in some respect unsurpassed.

চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক বিস্ময়ের নাম আবু বকর মুহাম্মাদ বিন জাকারিয়া আর রাজি। Browne মতে:  Al Razi was the most original and respectable physician of Islam. তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে Pediatrics এর জনক বলা হয়।

প্রফেসর মিটলার এর ভাষায় : তিনি সর্ব প্রথম শিশুরোগ সম্পর্কে নতুন মতবাদ ও গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। আল রাজি শিশু রোগকে ২৬ ভাগে বিভক্ত করেন। এ মহান চিকিৎসক সর্বপ্রথম স্নায়ু দূর্বলতাকে মানসিক রোগ হিসেবে Neuro psychiatric  সম্পর্কে আলোচনা করেন। তার রচিত “কিতাবুল মানসুরী ”, “জুদবী ওয়াল হাসবাত” ইত্যাদি গ্রন্থ গুলো ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের এমন ভাবে আকর্ষণ করে যে তারা তার বই ল্যাটিন অনুবাদ করে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। অপথালমিক সার্জারিতে তার বিশেষ অবদান আছে।

Dr. Muttler বলেন, আলি ইবনে আব্বাস ছিলেন ইতিহাসের সেরা সার্জারী চিকিৎসক। তার রচিত “কিতাবুল মালেকী” পরে ড. আর কোনিং ফরাসী অনুবাদ করেন এই বইটির ১৯ তম খন্ডে ১১০ টি অধ্যায় সার্জারী নিয়ে রচিত যা ইতিহাস শ্রেষ্ঠ চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা অকপটে জানান দিতে ভূল করেননি। এ গ্রন্থে দেখা যায় আলি ইবনে আব্বাস ক্যানসারেরও অপারেশন করেছেন। তিনিই সর্বপ্রথম ব্যান্ডেজের ব্যাবহার চালু করেন।

নবম শতাব্দীতে স্পেনের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসাবিদ ছিলেন আবুল কাশেম আর জাহরাভী। তিনিই ইউরোপের সর্বপ্রথম সার্জিকাল  বিদ্যার প্রচলন ঘটিয়েছিলেন। ইউরোপের খৃষ্টানরা ছিল শব ব্যাবচ্ছেদেও ব্যাপারে খুবই রক্ষণশীল। তার রচিত “আত তাশরিফ” এর শেষ খন্ডকে অধ্যাপক সারটন মেডিকেল এনসাইক্লোপিডিয়া হিসেবে অবহিত করেছেন। আবুল কাশেম আল জাহরাভীর রচিত “আত তাশরিফ” কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত ইউরোপের চিকিৎসকদের পাঠ্য পুস্তক হিসেবে পড়ানো হতো।

মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞানী ইবনে সিনার নাম শুনেনি এমন মানুষ হয়তো খুজে পাওয়া যাবে না। মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞান ও ইবনে সিনা যেনো একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। ইউরোপে তাকে চেনে Avicenna হিসেবে। তার অবদান উল্লেখ না করলে চিকিৎসা বিজ্ঞান লেখা হবে না। তার রচিত “আল কানুন ফিততিব” পশ্চাত্যে ও প্রাচ্যে অত্যান্ত প্রভাবশালী গ্রন্থ।

Dr. Osler says: Canon remain a Medical Bible for a longer period than any other work. ইবনে সিনা সর্বপ্রথম symptom, diagnosis, prognosis ইত্যাদি ফিচার চালু করেন।

জার্মান ভাষায় রচিত Die Anginhei kunds dies Ibn Sina বইতে ইবনে সিনার উল্লেখযোগ্য রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি ও তার অবদান নিয়ে আলোচনা করা হয়।
১. ডায়রিয়া
২. কোষ্ঠকাঠিন্য
৩. বেদনা
৪. পচন
৫. যক্ষা
৬. বসন্ত
৭. কুষ্ঠ
৮. হাড়ভাঙ্গা
৯. চর্ম
১০. লিউকোডামা
১১. পেডিকেলোসিস ইত্যাদি।

ইবনে সিনাই সর্বপ্রথম ফিজিও থেরাপি এর ধারনা সুত্রপাত ঘটান। টমাস ক্লিফোর্ড উল্লেখ করেছেন ইবনে সিনার ‘‘কানুন” হিপোক্রোটাস ও গ্যালোনের কৃতিত্বকে ম্লান করে দিয়েছেন।মিশরীয় মুসলিম চিকিৎসক আবু হাসান আলি ইবনে নাফিস ফুসফুস গঠনতন্ত্রের আবিস্কারক। তিনি ইতি পূর্বের চিকিৎসকদে রক্ত চলাচলের মতামতের প্রতিবাদ করে তার মতামত প্রতিষ্ঠা করেন।

সমর বিজ্ঞানে মুসলমান:
সুশৃংখল বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষনের বিকল্প নেই। ইসলামের ইতিহাসে মুসলমানদের রণকৌশল অসমান্য অবদান রেখেছে। মহানবী সা. এর যুগে বিভন্ন অভিযানে অংশগ্রহানের জন্য সাহাবায় কেরাম বিশেষ রেজিষ্ট্রি বই এ নাম লেখাতেন। সাহাবায় কেরাম রাযি. রণ প্রশিক্ষণের জন্য মানুুষ ও জন্তুদের মাঝে দৌড় প্রতিযোগিতা করাতেন। তীর ছুড়ে লক্ষ্যবস্তু ভেদ করার মত প্রশিক্ষণের উপর সর্বধিক গুরুত্ব আরোপ করতেন। যুদ্ধের স্থান নির্বাচন দৃঢ় মনোবল , ব্যাক্তিগত বীরত্ব, রণকৌশল এবং যুদ্ধ পরবর্তী ব্যাবহাওে তিনি যে রণনৈপূন্যের প্রমান দিয়েছেন তা আজও স্মরণীয় ।

খোলাফায়ে রাশেদার আমলে সামরিক ব্যাবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে। হযরত আলী রাযি. শাসন আমলে মুসলিম জাহানের সৈন্য সংখ্যা গিয়ে দাড়ায় নব্বই হাজারে। হযরত ওমর রাযি. সামরিক বহিনীর যথাযথ পারিশ্রমিক নির্ধারণ ও বন্টনের ভার “দিওয়ানের উপর অর্পন করেন। খেলাফায়ে রাশেদার যুগে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল আধুনিক সমৃদ্ধশালী সামরিক ঘাটির। এ সময় মুসলিম সম্রাজ্যে ৯ টি সামরিক ঘাটি ছিল যাহার প্রত্যেক ঘাটিতে ৩৬ হাজার অশ্বারহী সেনা প্রস্তুত থাকতো। এ সময় মুসলিম সৈন্যরা দূর্গ অবরোধকারী যন্ত্রসহ সকল প্রকার যুদ্ধাস্ত্রের ব্যাবহার শিখে ফেলে। আমরা উমাইয়া যুগে প্রথম ক্ষেপনাস্ত্র এর সফল ব্যবহার দেখতে পাই।

উপমহাদেশে সিন্ধু উপকূলে মুহাম্মাদ বিন কাসিম প্রথম অবরুদ্ধ দূর্গ প্রচীর ভেঙ্গেফেলার জন্য “মিনজানিক” নামক কামান ব্যাবহার করেন।

উল্লেখ্য যে , ‘মিনজানিক’ ই আধুনিক কামানের আদি জনক বলে মনে করা হয় । আরবরা ‘‘দবব্বা’ নামক আর একটি সমরাস্ত্র আবিস্কার করেন যা ইতিহাসের বিস্ময় হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

হযরত ওসমান রাযি. এর শাসন আমলে হযরত মুয়াবিয়া বিন আবি সুফিয়ানের নেতৃত্বে প্রথম মুসলিম নৌ বাহিনী গঠিত হবে। ২৮ হিযরী সনে মুসলিম নৌ অভিযানে সাইপ্রাস বাসীরা ৭২০০ স্বর্ণমুদ্রার বিনিময় সন্ধিতে উপনিত হতে বাধ্য হয়। নৌ বহরকে মুসলিমরা বলত উস্তুল আর ভূমধ্য সাগর ছিল তাদের নৌ ঘাটি। ৩০৩ হি. সনে “শীনি” নামক জাহাজ ঘাটির কথা উল্লেখ পাওয়া যায় যাহাতে ২০০ টি যুদ্ধ জাহাজ মোতায়ন রাখা হতো।

রণপোত কারখানা অর্থাৎ সমরাস্ত্র কারখানা আরবদের হাতেই প্রতিষ্ঠা লাভ করে । মুসলমানরা সর্বপ্রথম রণপোত কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন প্রথম শতাব্দীতে মিশরে ফুস্তাত নামক স্থানে।

Encyclopedia of Islam এ কথা উল্লেখ্য যে, বিখ্যাত নৌ বিজ্ঞানী ও সাহাসী নাবিক আহমদ ইবনে মজিদ ১৪৮৯ খৃ. ২৪ এপ্রিল ভাস্কো-দা-গামাকে নিয়ে আফ্রিকা ঘুরে পানি পথে ভারত যাত্রা করেন।

কারণ ইবনে মজিদেও অভিজ্ঞতা, পথ নির্দেশনা ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষনের উপর ভাস্কো-দা-গামা পুরোপুরি নির্ভরশীল ছিলেন। কিন্তু খৃস্টান ইতিহাসবিদরা সু কৌশলে ইবনে মজিদ নাম এড়িয়ে গেছেন। যুদ্ধজাহাজ পরিচালনায় দূরবীন ও নৌ কম্পাস যন্ত্র প্রথম প্রচলন করেন নৌ কমন্ডার আবুল হাসান।

জ্যোতির্বিজ্ঞানে মুসলমান :
পবিত্র কোরআন মাজীদে আমরা জ্যোতির্বিজ্ঞান আয়াত দেখতে পাই। যেমন সুরা লুকমানের ১০ আয়াতে-
خَلَقَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا
অর্থাৎ তিনি আকাশ মন্ডলি সৃষ্টি করেছেন কোন খুটি ছাড়া।

সুরা ক্বাফ এর আয়াত নং ৬
أَفَلَمْ يَنْظُرُوا إِلَى السَّمَاءِ فَوْقَهُمْ كَيْفَ بَنَيْنَاهَا وَزَيَّنَّاهَا وَمَا لَهَا مِنْ فُرُوجٍ
অর্থাৎ তারা কি ঊর্ধস্থিত আকাশের দিকে দৃষ্টি প্রসারিত করে দেখেনা? আমি উহা কিভাবে নির্মাণ করেছি এবং সুশোভিত করেছি আর এতে কোন ফাটল নেই।

সুরা আর রহমানের ৫ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা গ্রহ নক্ষত্র এর  পরিভ্রমণ এবং নিয়ন্ত্রন সম্পর্কে বলেছেন,
الشَّمْسُ وَالْقَمَرُ بِحُسْبَانٍ
অর্থাৎ সূর্য ও চাদ নির্ধারিত কক্ষপথে আবর্তন করে।

পবিত্র গ্রন্থ আলকুরআনে সৌর জগত ও গ্রহ নক্ষত্রের গতি পরিক্রমা সম্পর্কে যে বিস্ময়কর তথ্য দিয়েছে তা ১৪০০ বছরের সকল জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মাথা নিচু করে তা মেনে নিয়েছে। বিখ্যাত মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানী আল মাইমুন গ্রহের তির্যক গতি আবিস্কার করেন। বাযু মন্ডলের পরিবর্তন সংক্রান্ত তথ্য আবিস্কার করেন মহান জ্যোতির্বিদ আবুল হাসা। তিনি তার রচিত ‘‘সহিফায়ে যারকালিয়া’’ কিতাবের মাধ্যমে জ্যোতির্বিজ্ঞানকে ব্যাবহারিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আল ফারাবী প্রথম এ্যাস্ট্রোল্যাব আবিস্কার করেন।

মুহাম্মাদ ইবনে মুসা এ্যাস্ট্রোল্যাব ও এ্যাস্ট্রোল্যাব তৈরির বিষয় দুই আলাদা গ্রন্থ লিখেন। জাবের ইবনে সিনান মান নির্নয়ের এমন যন্ত্র আবিস্কার করেন যার মাধ্যমে কোনের হিসাব মিনিট পর্যন্ত করা যেত। তার আবিস্কৃত এ যন্ত্রকে Spherical Astrolab নাম দেয়া হয়। আলি ইবনে ঈসা আল উস্তরলাভী একটি Sextant উদ্ভাবন করেন যার দ্বারা সর্বনিন্ম দূরুত্বের পরিমাপ করা যেত । (The Age of Faith- p248)

ঘড়িতে প্যান্ডুলাম ও দোলকের ব্যাবহার: মুসলমানরাই প্রথম ব্যাবহার করে। History of the conflict between Religion and Science গ্রন্থে ড. ড্রপার বলেন, to the measurement of time by clocks of various kind by clepsydra and sundials , they were the first to introduce of this purpoe the use of Pendulum.

মুুসলমানরা তারকারাজির সঠিক দূরুত্ব পরিমাপের জন্য স্কাইগ্লোব তৈরী করেন। ১০৮১ খৃ ইব্রাহীম আস সাহদী বেলেনসী তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে সবচেয়ে প্রাচীন গ্লোব তৈরী করেন। যাহার গায়ে ৪৭টি তারকা পুঞ্জ খোদাই করা হয়ে ছিল যার মাঝে ১০১৫ টিতে তারকা সঠিক আয়াতনে দেখা যেত।
In 1081 , Ibrahim al Sahdi of Valencia constructed the oldest known celestial glob- The  Age of Faith – page: 329

মুসলমানরা মারাগায় একটি ওয়াল কোয়াডরেন্ট (কৌনিক পরিমাপ যন্ত্র) তৈরী করেছিল যার বড় বৃত্তটি ১২ ফিট প্রশস্ত ছিল। এর মধ্যে সেকেন্ড ও মিনিট দেখা যেত।

The legacy of Islam
জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে আল বাত্তালী একটি বিশেষ নাম যাকে মুসলিম বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জ্যোতির্বিদ হিসেবে গননা করা হয়। তিনি সর্বপ্রথম তার রচিত “কিতাবুল জিজ” এ চন্দ্র ও সূর্য গ্রহনের কথা প্রমান করেন। ইতিহাসে অমর বিজ্ঞানী আবু রায়হান আল বিরুনী তার রচিত “কানুনে মাসউদী” গ্রন্থে জ্যোতির্বিজ্ঞানের মধ্য দিয়ে ত্রিকোনমিতিকে উচ্চস্তওে উন্নতি করার কাজের কৃত্ত্বি লাভ করেন। বর্তমানের বিজ্ঞান গ্রন্থগুলোতে Heliocentric মতবাদকে কোপারর্নিকাসের আবিস্কার বলে চালানো হয়েছে অথচ এর ৩০০ বছর পূর্বে কানুনে মাসউদীতে আল বিরুনী পৃথিবীর গতি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন । ইবনে সিনা my² গননা উপযোগী venire এর মত যন্ত্র আবিস্কার করেন।
History of the Intellectual Development of Europe – vol 2.

J. W. Draper said, Abul Fargani of Transoxiana wrote an astronomical text remained in Europe and Western Asia for 700 years.

ইউরোপের জ্যোতির্বিজ্ঞান শুরুর ভিত্তি হল আল ফারগানীর কিতাবের তরজমা। ইতিহাসের অমর জ্যোতির্বিজ্ঞানী আবুল ওয়াফা বোযজানী চাদের তৃতীয় পরিবর্তন বা খঁহবৎ ঠধৎরধঃরড়হ আবিস্কার করেন।

গণিত বিজ্ঞানে মুসলমান:
পবিত্র কোরআনে সংখ্যা চর্চা বিষয়াক অনেক আয়াত রয়েছে।
قَالَ كَمْ لَبِثْتُمْ فِي الْأَرْضِ عَدَدَ سِنِينَ قَالُوا لَبِثْنَا يَوْمًا أَوْ بَعْضَ يَوْمٍ فَاسْأَلِ الْعَادِّينَ
সুরা মু’মিনে বলা হচ্ছে- আল্লাহ তায়ালা বলবেন তোমরা পৃথিবীতে কতো বছর অবস্থান করছিলে? ওরা বলবে আমরা অবস্থান করেছেলাম একদিন বা একদিনের কিছু অংশ।
وَآتَاكُمْ مِنْ كُلِّ مَا سَأَلْتُمُوهُ وَإِنْ تَعُدُّوا نِعْمَتَ اللَّهِ لَا تُحْصُوهَا إِنَّ الْإِنْسَانَ لَظَلُومٌ كَفَّارٌ
সুরা ইবরাহীমে আল্লাহর অফুরন্ত নেয়ামত সম্পর্কে বলা হচ্ছে: যদি তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহসমূহ গণনা কর তবে উহার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না।

বিজ্ঞানের সকল সূত্রপাত অংকশাস্ত্রের হাতেই আরাম্ভ হয়। বিজ্ঞানে লা পিউরা ল্যাংগুয়েজ বলতে অংককেই বুঝানো হয়। ইসলামিক সায়েন্স গ্রন্থের লেখক সাইদ হোসেন নাজি ইখওয়ানুস-সাফার গাণিতিক মতবাদ প্রসংঙ্গে লিখেছেন: সংখ্যা বিজ্ঞান বিজ্ঞানসমূহের বুনিয়াদ… প্রথম স্পর্শমনি ও মহান রসায়ন। খলিফা ওমর রাযি. সময়ে তিনি হিজরী সন চালু কওে শাসন ও রাজত্ব ব্যাবস্থা সূদৃঢ় করেন। এর পরই মুসলমানরা আরবী অক্ষরসমূহকে “আবজাদ” সংখ্যামালার গণনা অনুযায়ী ব্যবহার করা শুরু করে।

আব্বাসীয় খলীফা আবু জাফর আল মনসুরের রাজত্বকালে আবু ইসহাক আল ফাজারী সর্বপ্রথম সমূদ্রে সূর্য ও নক্ষত্রসমূহের উচ্চতা নির্ণায়ক যন্ত্র আস্তারলব নির্মাণ করেন এবং অংক শাস্ত্রেও অন্যান্য যন্ত্রপাতি সম্বন্ধে পুস্তক প্রণয়ন করেন। আল ফাজারী প্রথম আরব গণনা পদ্ধতি সুনিয়ন্ত্রিত কওে আরব বর্ষগণনা ও দিনপঞ্জী প্রণয়ন করেন। Rise and fall of the Arav Dominion গ্রন্থে H. A Salmon says: The Arab were the first to introduce Greek writes to the notice of the world. The present center of civilization and progress would have been irradiated by the bright light of knowledge.

সৈয়দ আমীর আলি লিখেছেন : উচ্চতর গণিতের প্রত্যকটি মুসলিম প্রতিভার সাক্ষর বহন করে। ওসলনার যথার্থই বলেছেন: গ্রীকদের বীজগণিত সীমাবদ্ধ ছিল গবলেট খেলার জন্য আমোদের উপকরণ হিসেব। মুসলমানরাই বীজগণিতকে উচ্চতর উদ্দেশ্যে ব্যাবহার করে। তারা গোলাকার ত্রিকোণোমিতি আবিস্কার করে। তারাই সর্বপ্রথম জ্যামিতিতে বীজগণিতের প্রয়োগ করে, স্পর্শক আবিস্কার করে আর ত্রিকোণমিতির হিসাবে জ্যা এর পরিবর্তে সাইন এর ব্যাবহার করে।

আবু আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ ইবনে মুসা আল খারেজমী গণিত বিজ্ঞানের একজন কালজয়ী প্রতিভা। তিনিই সর্বপ্রথম বীজগণিতকে অংঙ্ক শাস্ত্রের মধ্যে মর্যাদাসম্পন্ন করে। এ জন্যই তাকে আধুনিক বীজগণিতের জনক বলা হয়। তার অসামান্য প্রতিভা সম্পর্কে Zvi বলেন: The gratest Mathematician f the time and if one takes all circumstances into account, one of the greatest of all time was Al-khwarizami.

তিনি একাধারে জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং অন্যদিকে অঙ্ক ও বীজগণিতের আবিস্কারক। তার বিখ্যাত গ্রন্থ “আল-জাবর-আল-মুকাবেলা” ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অঙ্কশাস্ত্রের শ্রেষ্ঠ পাঠ্যপুস্তক ছিল । এ গ্রন্থে তিনি ৮০০ উদাহরণের মাধ্যমে সমীকরেণের জটিল সকল সমস্যার সমাধান করেন। তিনিই সর্বপ্রথম আরব সংখ্যারীতি বীজগণিতে প্রবর্তন করেন। ঐতিহাসিক পি কে হিট্টি মতে: ত্রিকোণমিতির বিজ্ঞান, যেমন বীজগণিত এবং জ্যামিতি প্রধানত আরবদের  দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়ে ছিল ।

বীজগণিতের অন্যতম যে অংশ লগারিদম আজ আমরা দেখতে পাই তা আল খারিজিমি নাম থেকেই উদ্ভুত। আল খারিজিমি আল জাম ওয়াত তাফরীক গ্রন্থে সংখ্যার উৎপত্তি নিয়ে আলোচনা করেন। আরব বৈজ্ঞানীকগণ অঙ্ক সংখ্যা লিখার মধ্যে ‘শূন্য’ ব্যাবহার করবার নিয়ম পদ্ধতির আবিস্কারক এবং সর্বপ্রথম ব্যবহারকারী সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। শূন্য আবিস্কারের পূর্বে মানুষ এবাকাস ব্যাবহার করত।

দশম শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুসলিম বৈজ্ঞানিক আবুল ওয়াফা ত্রিকোণমিতির তালিকা প্রণয়ন করেন। তিনিই সর্বপ্রথম সাইন উপপাদ্যেও সঙ্গে গোলাকার ত্রিভূজের সাধারণত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। বিজ্ঞানী আবু  আব্দুল্লাহ ইবনে জবির ইবনে সিনান আল বাত্তানী সর্বপ্রথম ত্রিকোণমিতির  অনুপাত প্রকাশ করেন। কবি ওমর খৈয়াম (১০২১-১১২৩ সাল) অনেক উচু দরের গণিতবিদ ও বিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি পাটিগণিত, বীজগণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের উপর বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন। ওমর খৈয়ামই প্রথম কণিকের ছেদ দ্বারা এর দ্বিঘাত , ত্রিঘাত ও ঘন সমীকরণগুলোর সমাধান বের করেন। John William Draper Zvi তার গ্রন্থে এ সিকারক্তি দিয়ে বলেন: Not one of the purely mathematical, mixed or practical sciences was omitted by the Arabs.

আধুনিক গনসংযোগ ও সাংবাদিকতার একটি সর্বশেষ টার্ম হল শিকারী সাংবাদিকতা। আপনি যদি মুসলিম সভ্যতার অবদান এ বিশ্বের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে চান তাহলে দেখবেন যুগে যুগে ইহুদী , নাসারা ও পৌত্তালিক বৈজ্ঞানীক সমাজ মুসলমানদের অবদানকে নিজেদের নামে চালিয়ে দিয়ে মুসলমানদের অবদানকে পাশ কাটিয়ে গেছে। কিন্তু সত্য গোপন করা যায় না। মুসলমানদের জ্ঞান বিজ্ঞানে অবদানগুলো আধুনিক ভাষায় হলুদ সাংবাদিকতা ও শিকিরী সাংবাদিকতার শিকার। পরিষেশে আমি এটুকু বলতে পারি মুসলমানরা সভ্যতা বির্ণিমানে যে পরিমান অবদান রেখেছে তা অন্য কোন জাতি এ পরিমান অবদান রাখতে পারেনি। বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান এত সল্প পরিসরে লেখা উচিৎ নয়। তবুও আমাদের মুসলিম যুবসমাজকে মুসলিম অবদানের একটি শিশির বিন্দু দেখানোর চেষ্টা করলাম।

প্রবন্ধ লেখকঃ
কামিল হাদীস, আহসানাবাদ রশীদিয়া কামিল মাদ্রাসা, চরমোনাই, বরিশাল ।
বি,এ (অনার্স), – এম, এ ( ইংলিশ), ঢাকা কলেজ, ঢাকা।
সাধারণ সম্পাদক,
ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ,
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ।

তথ্যপঞ্জীঃ
• কুরআনুল কারীম।
• মাকতাবায়ে শামেলা ।
• বাইবেল কুরআন ও বিজ্ঞান- ড. মরিস বুকাইলি।
• বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান- মুহাম্মাদ নূরুল আমীন।
• মাসিক আল কাওসার ।
• The Age of Faith- Will Durant
• The legacy of Islam- Thomas Arnold sir
• দৈনিক কালের কন্ঠ।
• দৈনিক  ইনকিলাব।
• দৈনিক নয়া দিগন্ত।
• Introduction to The History of Science.
• শিকারি সাংবাদিকতার উত্থানপর্ব- অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী