মুসলিম যুবকদের স্বর্ণালী ইতিহাস

মুসলিম যুবকদের স্বর্ণালী ইতিহাস

যুব কলাম

নূরুল করীম আকরাম


বিশ্বটাকে যারা আপন হাতের মুঠোয় পুরে দেখেছেন, জ্ঞান-বিজ্ঞানে যারা ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী সৌধ নির্মাণ করেছিলেন এবং যারা ন্যায়পরায়ণতা ও ইনসাফের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিলেন পৃথিবীকে; তারাই আমাদের পূর্বপুরুষ। তারাই মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে গর্বিত অংশ মুসলিম যুবসমাজ। বক্ষমান নিবন্ধে সেই স্বর্ণালীসময় ও মানুষদের নিয়ে কিঞ্চিৎ আলোকপাতের প্রয়াস থাকবে, ইনশাআল্লাহ।

প্রথমত জ্ঞান-বিজ্ঞান, সভ্যতার বিনির্মান ও আবিস্কারে মুসলিম কৃতিত্ব এবং দ্বিতীয়ত শাসন ও ইনসাফের নজিরবিহীন উপমা, দিগ্বিজয়ী ও বিশ্ববিজয়ী মুসলিম সমর নায়কদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরবো, ইনশাআল্লাহ।

দুটি বিষয়ের ধারাক্রম উল্লেখের ক্ষেত্রে ‘চেতনার বহ্নিশিখা’ ও ‘অমর কীর্তিগাঁথা’ নামে অধ্যায় সাজানো হয়েছে। আলোচনা বা লেখার ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে এবং ইতিহাস বর্ণনায় বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের মর্যাদা বহাল রাখতে অনেক ক্ষেত্রেই যুবকদের পাশাপাশি যুবক নয় এমন মহান ব্যক্তিদেরও ইতিহাস নিয়ে আসা হয়েছে।

চেতনার বহ্নিশিখা:
শিল্পবিপ্লব ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাল্টে যাওয়া ইতিহাসের ফলস্বরূপ বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞানের আবিষ্কারে দৃশ্যত মুসলিম সংশ্লিষ্টতা দেখা না যাওয়ার ফলে মুসলিম যুবক তরুণরা এক ধরণের হীনমন্যতায় ভোগেন। যারা ইতিহাস জানেন তারা বিচ্ছিন্নভাবে আমাদের সোনালী দিনগুলোতে জ্ঞান-বিজ্ঞানের অবদানের কথা আলোচনায় আনলেও বিগত ১০০০ বছরে ইসলামী সভ্যতা যে বিশ্বের উন্নতির সর্বক্ষেত্রে সৃজনশীলতা ও আবিষ্কারের জনক, সে ইতিহাস এখন আর পশ্চিমা দুনিয়া তো বটেই; খোদ মুসলিম বিশ্বের বহু জ্ঞানী-বুদ্ধিজীবীরাও স্বীকার করতে চান না। কারণ ইতিহাস বিজয়ীর হাতেই লেখা হয়। পরাজিতরা সবসময়ই সে ইতিহাসে খলনায়কের ভূমিকাতেই থাকে।

খেলাফত পতন পরবর্তীগত একশত বছরে জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সভ্যতা, শাসন ও পরিচালনার প্রায় সকল ক্ষেত্রেই গোটা পৃথিবীজুড়ে পশ্চিমা বিশ্ব রাজত্ব করছে। আর মুসলিম দুনিয়া বৈষয়িকভাবে পরাজিত ও রিক্ত-নিঃস্ব হয়ে দিনাতিপাত করছে। এ থেকে উত্তরণে প্রয়োজন নিজেদের দায়িত্ব, কর্তব্য, করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে এখনই সজাগ সচেতন হওয়া। তাই প্রথমেই নিজেদের হৃত গৌরব ও অতীত ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক।

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
রসায়নের ইতিহাসে সর্বপ্রথম যার নামটি চলে আসে তিনি হচ্ছেন, আল জাবির। প্রস্তর নিক্ষেপ যন্ত্র, বারুদ, বন্দুক, কামান তো মুসলিমদেরই তৈরি। যুদ্ধের উন্নত কৌশল আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রথম আরবি ভাষায় বই লিখেছিল মুসলিমরা। বইয়ের নাম ‘আলফুরুসিয়া ওয়াল মানাসিব উল হারাবিয়া’। যা পরবর্তী আধুনিক বিশ্বের অন্যতম পাঠ্য ছিলো।

প্রথম ভূ-মানচিত্র এঁকেছিলেন মুসলিম ভূতাত্ত্বিকগণ। ৬৯ জন মুসলিম ভূগোলবিদ পৃথিবীর প্রথম যে মানচিত্র এঁকেছিলেন তা এখনও এক পরম বিস্ময়! এই মানচিত্রের নাম ছিলো, ‘সুরাতুল আরদ’ যার অর্থ হচ্ছে বিশ্ব আকৃতি। এক্ষেত্রে ইবনে ইউনুসের অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমা মন্ডল নিয়ে গবেষণার ফলকে ইউরোপ মাথা পেতে মেনে নিয়েছিল। আর মুসলিম ফরগানী, বাত্তানী ও আল খারেজমি প্রমুখের ভৌগলিক অবদান এখনো স্বর্ণমন্ডিত।

কম্পাস যন্ত্রের যিনি আবিষ্কারক তিনিও মুসলিম ছিলেন, ইবনে আহমদ। পানির গভীরতা এবং স্রোত মাপার যন্ত্রও আবিষ্কার করেছিলেন মুসলিম বিজ্ঞানী আবদুল মাজিদ। যে চিনি মানুষ তার প্রয়োজনে ব্যবহার করছে, সে চিনিও মুসলিমরা আবিষ্কার করেছিল। চিনিকে আরবরা সুক্কার বলে, সেই সুক্কার ইউরোপে সুগারে রূপান্তরিত হয়, আর ভারতে এই চিনিকে বলা হতো শর্করা।

ভূতত্ত্ব সম্পর্কে বিখ্যাত বই ‘মুজাম আল উবাদা’র লেখক হচ্ছেন মুসলিম- ইয়াকুব ইবনে আব্দুল্লাহ। তুলা থেকে প্রথম তুলট কাগজ আবিষ্কার করেন আরেক মুসলিম আবিষ্কারক- ইউসুফ ইবনে উমার। এই আবিষ্কারের মাত্র ২ বছর পরে বাগদাদের কাগজের কারখানা তৈরি করা হয়েছিল। আর মুসলিম বিজ্ঞানি জাবীর ইবনে হাইয়ান তো ইস্পাত তৈরি, ধাতুর শোধন, তরল বাষ্পীয় করণ, কাপড় ও চামড়া রঙ করা, ওয়াটার প্রুফ তৈরি করা, লোহার মরিচা প্রতিরোধক বার্ণিশ, চুলের কলপ, লেখার পাকা কালি আবিষ্কার করে বিজ্ঞান জগতে অমর হয়ে আছেন।

ম্যাঙ্গানিজ ডাই অস্কাইড থেকে যিনি প্রথম কাঁচ আবিষ্কার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনিও মুসলিম বিজ্ঞানি আর-রাজী। ইংরেজদের ইংরাজি শব্দে ঐ বৈজ্ঞানিকের নাম লেখা আছে জবুবং। তিনি একদিকে যেমন ছিলেন ধর্মীয় পন্ডিত তেমনই অন্যদিকে ছিলেন গণিতজ্ঞ ও চিকিৎসা বিশারদ। সোহাগা, পারদ, গন্ধক, আর্সেনিক ও সালমিয়াক নিয়ে তার লেখা গবেষণা উল্লেখযোগ্য। পৃথিবীতে প্রথম পানি জমিয়ে বরফ তৈরি তারই অক্ষয় কীর্তি। এর পরে ইউরোপ বরফ তৈরির কারখানা তৈরি করেছিল।

পৃথিবীখ্যাত গণিত এবং চিকিৎসা বিশারদ ওমর খৈয়ামের কথা সর্বজনবিদিত। তিনিও মুসলিম জামানায় জ্ঞান-বিজ্ঞান অর্জনের সুফলতা ভোগ করে এত বড় পন্ডিত হতে পেরেছিলেন। একইভাবে নাসির উদ্দিন তুসী ও আবু সিনার নাম এবং তাদের অবদান সর্বজনবিদিত। পৃথিবীর ১ম বীজ গণিতের জন্মদাতা মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল খারেজমি। তিনি ভারতকে নিয়ে একটি বই লিখেছিলেন, যার নাম কিতাবুল হিন্দ। অংকে শূন্যের মূল্য অমূল্য এবং অপরিসীম। এই শূন্য [০] আবিষ্কার তার বলে দাবি করা হয়। ‘হিসাবুল জাবর ওয়াল মোকাবেলা’ বইটি তার বিরাট অবদানের কথা মনে করিয়ে দিবে। শুধু তাই নয় তিনি জ্যোতির্বিদও ছিলেন। খলিফার অনুরোধে আকাশের মানচিত্রও তিনি এঁকেছিলেন এবং একটি পঞ্জিকার জন্ম দেন। তাকে সরকারী উপাধি দেয়া হয়েছিল- ‘সাহিব আলজিজ’।

বিজ্ঞানের থিওরি ও তত্ত্ব নিয়ে মুসলিম বিজ্ঞানি আল-কিন্দি লিখেছিলেন ২৭৫টি বই। আর প্রাচীন মুসলিম বৈজ্ঞানিক, হাসান, আহমাদ ও মুহাম্মদ সম্মিলিতভাবে ৮৬০ সালে বিজ্ঞানের একশত রকমের যন্ত্র তৈরির নিয়ম ও ব্যবহার প্রণালী এবং তার প্রয়োজন নিয়ে বই লিখে রেখে গেছেন।

ইতিহাস বিভাগে তো মুসলিম ঐতিহাসিকদের অবদানের কথা বাদ দিয়ে পৃথিবীর ইতিহাস লেখা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। আজ যে ভারতীয়রা তাদের ইতিহাস নিয়ে গর্ব করার মত উপাদান পেয়েছে, সেই উপাদান তারা পেতেন না যদি তাদের ইতিহাস মুসলিম ঐতিহাসিকগণ লিপিবদ্ধ করে না যেতেন। তবে এই ক্ষেত্রে ইংরেজ ঐতিহাসিকদের অবদানও কম নয়। তবে মনে রাখতে হবে ইতিহাসের স্রষ্টা মুসলিম তার অনুবাদক ইংরেজরা।

আলবিরুনী, ইবনে বতুতা, আলী বিন হামিদ, বাইহাকী, উৎবী, কাজী মিনহাজুদ্দিন সিরাজ, মহীয়ুদ্দিন, মুহাম্মদ ঘোরী, জিয়া উদ্দিন বারণী, আমীর খসরু, শামসী সিরাজ, বাবর, ইয়াহিয়া বিন আহমদ, জওহর, আব্বাস শেরওয়ানী, আবুল ফজল, বাদাউনি, ফিরিস্তা, কাফি খাঁ, মীর গোলাম হুসাইন, হুসাইন সালেমি, সাইদ আলী প্রমুখ যে ইতিহাসের বইগুলো লিখে গেছেন- তারিখই সিন্ধু, চাচা নামা, কিতাবুল-ইয়ামিনি, তারিখ-ই মাসুদী, তারিখ-ই ফিরোজশাহী, তারিখুল হিন্দ, তা’জুম্মাসির, তবকত-ই-নাসিরি, খাজেনুল ফতওয়া, ফতওয়া উস সালাতিন, কিতাবুর-রাহলাব, তারিখই মুবারক শাহী, তারিখে সানাতিনে আফগান, তারিখ-ই শেরশাহী, মাখজানে আফগান, আকবর নামা, আইনে আকবর, মুনতাখাবুত তাওয়ারিখ, মুন্তাখাবুল লুবাব, ফতহুল বুলদান, আনসাবুল আশরাক ওয়া আখবারুহা, উয়ুনুল আখইয়ার, তারিখে ইয়াকুব, তারিখে তাবারী, আখবারুজ্জামান, মারওয়াজুজ জাহাব, তামবিনুল আশরাফ, কামিল, উসদুল গাবাহ, আখবারুল আব্বাস, কিতাবুল ফিদ’আ, মুয়াজ্জামুল বুলদান ইত্যাদি।

জ্ঞান ও উৎসমূল
পৃথিবীর বুকে জ্ঞানকে প্রকাশ প্রচারের আদিমতম বাহন ছিল কলম এরপর বই লিখে তাতে সংরক্ষণ করা, পরবর্তী ধাপ গ্রন্থাগার নির্মাণ, এর পরবর্তী ধাপ পাঠশালা, বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা। মুসলিমদের সভ্যতায় এই বিষয়গুলো কতটুকু অগ্রসর ছিলো তা নিয়েও কিঞ্চিৎ আলোকপাত করা প্রয়োজন।

হাদীসে এসেছে ‘প্রত্যেক মুসলিমের জন্য জ্ঞান অর্জন অবশ্য কর্তব্য’, ‘সমস্ত রাত্রির প্রার্থনার চেয়ে এক ঘণ্টা জ্ঞান (ইলম) চর্চা করা উত্তম’, ‘যে জ্ঞানীকে সম্মান করে, সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সম্মান করে’। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশনার বাস্তবায়ন তাঁর জীবদ্দশাতেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। তাঁর ইন্তেকালের ১১৮ বছরের মধ্যে ইউরোপ এশিয়া আফ্রিকা তথা স্পেন থেকে শুরু করে ভারতের সিন্ধু নদ পর্যন্ত ইসলামী সভ্যতার বিকাশ লাভ হয়েছিল। মুসলিমরা শুধু দেশ জয় করে ক্ষান্ত থাকেননি; বরং ঐ সকল এলাকায় পন্ডিত ব্যক্তিদেরকে গবেষণায় উৎসাহিত করেছেন, গ্রন্থাগার গড়েছেন, গ্রন্থাগারসমূহে নতুন পুরাতন গ্রন্থ পুথি পুস্তকে পরিপূর্ণ করেছিলেন। তাই সালেনা, কার্ডোভা, বাগদাদ, কায়রোতে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল।

উমর রা. এর শাহাদাতের একশত বছর পর বাগদাদে প্রথম লাইব্রেরী পরিদৃষ্ট হয়। উমাইয়াদের আমলে ব্যাকরণ লেখা, ইতিহাস লেখা, স্থাপত্য বিদ্যার অগ্রগতি হওয়া শুরু করেছিল। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু যখন ইন্তেকাল করেন, তখন বড় এক উট বোঝাই বই রেখে গিয়েছিলেন। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, তখন আমাদের আজকের মত বই সংগ্রহ করা এতোটা সোজা ছিলোনা। কারণ ঐ সব বই সবই ছিল হাতের লেখা। আবু হুরাইরা রা. বহু বই রেখে গিয়েছিলেন। রাসূল সা. এর তরবারির খাপেও অনেক বইয়ের উপকরণ সংরক্ষণ করে গিয়েছিলেন। এই তো ৫০/৬০ বছর আগেও লোকে বাঁশের চোংগার মধ্যে বই সংরক্ষণ করতেন। গ্রন্থ পুস্তক সংগ্রহ করা মুসলিমদের জাতীয় বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। বন্দরে বন্দরে লোক প্রস্তুত থাকতো কোন নতুন লোক এলেই তার কাছে পাওয়া নতুন বইয়ের অনুলিপি তৈরির জন্য। অনুলিপি তৈরি করে মূল বই বাহককে ফেরত দেয়া হতো। আর কেউ যদি মূল বই বিক্রয় করতে চাইতো, তাহলে যথার্থ মূল্য দিয়ে কিনে নেয়া হতো।

আব্বাসীয় খলিফা মামুন বাগদাদে ‘দারুল হিকমাহ’ নামে যে বিজ্ঞান কেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন তাতে সে যুগেই প্রায় ৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছিল। সেই বিরাট গ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান ছিলেন, পৃথিবীর ১ম বীজ গণিতের জন্মদাতা মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল খারেজমি। তিনি ভারতকে নিয়ে একটি বই লিখেছিলেন, যার নাম কিতাবুল হিন্দ। অংক বিভাগে শূন্যের মূল্য অমূল্য এবং অপরিসীম। এই শূন্য [০] আবিষ্কার তার বলে দাবি করা হয়। ‘হিসাব আল জাবর ওয়াল মোকাবেলা’ বইটি তার বিরাট অবদানের কথা মনে করিয়ে দিবে। আল মুকাদ্দাসি একজন পর্যটক ছিলেন। তিনি আদাদউল্লাহ সিরাজ শহরে এমন একটি লাইব্রেরী ভবন তৈরি করেছিলেন, তখনকার পৃথিবীতে আর কোথাও দ্বিতীয়টির নজির ছিলনা।

‘The Bible the Quran and Science’ গ্রন্থে ডক্টর মরিস বুকাইলী উল্লেখ করেন, ‘অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীতে ইসলাম জ্ঞান-বিজ্ঞানকে অনেক ঊর্ধ্বে তুলে ধরে। যখন খ্রিষ্টীয় জগতে বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের ওপর নিষেধাজ্ঞা চলছিল তখন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে বহুসংখ্যক গবেষণা ও আবিষ্কার সাধিত হয়। কর্ডোভার রাজকীয় পাঠাগারে ৪ লাখ বই ছিল। ইবনে রুশদ তখন সেখানে গ্রীক, ভারতীয় ও পারস্য দেশীয় বিজ্ঞানে পাঠদান করতেন। যার কারণে সারা ইউরোপ থেকে পন্ডিতরা কর্ডোভায় পড়তে যেতেন, যেমন আজকের দুনিয়ায় মানুষ তাদের শিক্ষার পরিপূর্ণতার জন্য আমেরিকা যায়।

‘ইসলাম ও আরবি সভ্যতার ইতিহাস’ বইতে ওস্তাভলি বোঁ লিখেছেন, ‘ইউরোপে যখন বই ও পাঠাগারের কোন অস্তিত্ব ছিল না, অনেক মুসলিম দেশে তখন প্রচুর বই ও পাঠাগার ছিল। সত্যিকার অর্থে বাগদাদের ‘বায়তুল হিকমাহ’য় ৪০ লক্ষ, কায়রোর সুলতানের পাঠাগারে ১০ লক্ষ, সিরিয়ার ত্রিপোলী পাঠাগারে ৩০ লক্ষ বই ছিল। অপরদিকে মুসলমানদের সময়ে কেবল স্পেনেই প্রতিবছর ৭০ থেকে ৮০ হাজার বই প্রকাশিত হতো। সে সময়ে মুসলিমদের তৈরি যে সকল বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো সেগুলো হচ্ছে- গ্রানাডা, টলেডো, মার্সিয়া, আলমেরিয়া, সেভিল, ভ্যালন্সিয়া কাদজে বিশ্ববিদ্যালয়। এইগুলোই হচ্ছে আজকের ইউরোপ আমেরিকার জগত বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদাতা। ঐ সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্পেন, ফ্রান্স, ইটালি এমনকি জার্মানির জ্ঞান বিজ্ঞান সাধকদেরকে চুম্বকের মত টেনে নিয়ে যেত। মুসলমানদের অতীত ইতিহাস বই পড়ার ইতিহাস। জ্ঞান- বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাস।কিন্তু বর্তমানে মুসলিম দেশগুলোতে বইয়ের কদর নেই।

অমর কীর্তিগাঁথা:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকালের পর হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. ইসলামি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তিত্ব তথা আমিরুল মুমিনীন হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নেতৃত্বে রিদ্দার যুদ্ধ, বাইজেন্টাইন ও সাসানীয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হয় এবং মুসলিমরা ঐতিহাসিক বিজয় লাভ করে।

নবীজীর ইন্তেকালের পর ইসলামী দুনিয়ায় অনাহুত নতুন ফিতনার মোকাবিলা তাঁর অনন্য কীর্তি হিসাবে পরিগণিত হয়।উমর ইবনুল খাত্তাব রা. ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ছিলেন। সবচাইতে ক্যারিশম্যাটিক রাষ্ট্রনায়ক ও বিচক্ষণ খলিফা হিসেবে তাঁকে অমুসলিম দুনিয়াও সম্মানের সাথে স্মরণ করে থাকে। তাঁর নেতৃত্বে সিরিয়া, ফিলিস্তিন, আর্মেনিয়া, মিশর, উত্তর আফ্রিকা, ইরাক, ইস্ফাহান, তাবারিস্তান, ফারস, কিরমান, মাকরান, সিস্তান, আজারবাইজান, খোরাসানসহ বহু অঞ্চলে মুসলিমরা বিজয় লাভ করে। জেরুজালেম মুসলমানদের প্রথম কিবলা আল-আকসা জয় তাঁর অন্যতম অমর কীর্তি।

উসমান রা. এর নেতৃত্বে ইসলামী সাম্রাজ্য মিশর, উত্তর আফ্রিকা, আইবেরিয়ান পেনিন্সুলা, নুবিয়া, ভূমধ্যসাগরের দ্বীপপুঞ্জ, সিরিয়া, আনাতোলিয়া, ফারস, সিস্তান, তাবারিস্তান, খোরাসান, ট্রান্স-অক্সানিয়া, মাকরান, বালুচিস্তান পর্যন্ত প্রসারিত হয়। পবিত্র কুরআনে কারীমকে এক মলাটে নিয়ে আসা তাঁর অন্যতম কৃতিত্ব।

চতুর্থ খলিফা হযরত আলী রা. মহাবীর ও বড় জ্ঞানী হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। রাসূল তাঁকে খাইবার যুদ্ধে কামূস দুর্গ জয় করার কারণে ‘আসাদুল্লাহ’ উপাধিতে ভূষিত করেন এবং বদর যুদ্ধে বিশেষ বীরত্বের জন্য ‘যুলফিকার’ নামের তরবারিটি উপহার দিয়েছিলেন। এছাড়াও বহু যুদ্ধে সেনাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি দায়িত্বে থাকাকালীন মুসলিম বিশ্ব এক অস্থির সময় পার করে। যা তিনি বিচক্ষণতার সাথে মোকাবেলা করেছেন।

যুবক সাহাবী তালহা ইবনে উবাইদিল্লাহ রা. ইসলামী ইতিহাসের একজন বীর যোদ্ধা ছিলেন। উহুদ যুদ্ধে উপস্থিত সবাই ছিলো তাঁর বীরত্বের গুণমুগ্ধ। রিদ্দার যুদ্ধে মদিনা সুরক্ষার জন্য গঠিত বাহিনীর এক অংশের প্রধান ছিলেন তিনি। যুবাইর ইবনুল আওয়াম যৌবনদীপ্ত বীর যোদ্ধা। বদর, উহুদ, খন্দক, খায়বার, মক্কা বিজয়সহ বহু যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। রিদ্দার যুদ্ধ, মিশর বিজয়, ইয়ারমুকের যুদ্ধসহ বহু যুদ্ধে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তিনি খেলাফতে রাশেদার রাজনৈতিক অঙ্গনের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। আবদুর রহমান ইবনে আউফ রা. যৌবনেই বদর ও দাওমাতুল জান্দালে অংশ নিয়েছিলেন।

আরেকজন যোয়ান সাহাবী সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রা.। বদর, উহুদসহ বহু ঐতিহাসিক যুদ্ধের সাক্ষী। তিনি একজন বীর ব্যক্তি ছিলেন। তিনি পারস্য বিজয় তথা কাদিসিয়ার যুদ্ধের সেনাপতি ছিলেন। তিনিও প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি সামরিক বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন এবং গভর্নর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ বহু ঐতিহাসিক যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, একজন যোদ্ধা সাহাবী ছিলেন। তার নেতৃত্বে পরিচালিত একটি অভিযান ‘আবু উবাইদাহর অভিযান’ নামে অভিহিত হয়ে থাকে। সা‘ঈদ বিন যাইদ ইসলামের প্রথম যুগে সংঘটিত কয়েকটি যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।

খালিদ বিন ওয়ালিদ ইসলামের ইতিহাসে একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ সেনানায়ক হিসেবে পরিচিত। তার বীরত্বের কারণে তিনি সাইফুল্লাহ উপাধি পেয়েছিলেন। মুসলমান এবং রোম বাহিনির মাঝে সংগঠিত ঐতিহাসিক মুতার যুদ্ধসহ ছোট বড় প্রায় ১০০ টি যুদ্ধে তিনি নেতৃত্ব প্রদান করেন। নবীজীর প্রিয় চাচা হামযা ইবনে আবদুল মুত্তালিব রা. এর বীরত্বও সাহাবীদের মাঝে প্রবাদপ্রতিম ছিলো। রাসূল সা. তাঁকে সায়্যিদুশ শুহাদা (নিহতদের নেতা) উপাধি দিয়েছিলেন। তিনি বদর এবং উহুদ যুদ্ধে মুসলিম বাহিনিকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি উহুদ যুদ্ধে হাবশি গোলাম ওয়াহশির বর্শার আঘাতে শাহাদাত বরণ করেন। আমর ইবনুল আস রা. গোটা আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বীর যোদ্ধা ও কূটনৈতিক হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। খেলাফতের যুগে রাজনৈতিক অঙ্গনে খুব-ই প্রভাবশালী ছিলেন। তার নেতৃত্বে মিশর বিজিত হয়েছিল। তিনি মুসলিম হওয়ার পরে মুসলমানদের সাথে প্রায় প্রতিটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি সিফফিনের যুদ্ধে বিবাদমান দু’টি পক্ষের মাঝে মধ্যস্থতা করেন।

কাতিবে ওহী হযরত মুয়াবিয়া রা. ছিলেন খিলাফত আমলের একজন অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তিনিও ছিলেন একজন বীর যোদ্ধা। তাঁর পর থেকেই উমাইয়া খেলাফতের সূচনা হয়। হোসাইন ইবনে আলী রা. ছিলেন বীর নওজোয়ান এক যোদ্ধা। কারবালার ময়দানে ক্ষমতা লিপ্সু ও পাষাণ দিলের মানুষদের হাতে অত্যন্ত হৃদয়বিদারকভাবে শাহাদাত বরণ করেন। সেই সাথে জীবন দিয়ে হলেও সত্যের পথে অটল-অবিচল থাকার নজীর রেখে গেছেন উম্মাহর মাঝে। আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. ছিলেন দ্বিতীয় খলিফা ওমর রা. এর পুত্র। তিনি ফিকহে ইসলামীর একজন ছিলেন। উকবা ইবনে নাফি’ রা. উত্তর আফ্রিকার অভিযানে মুসলিম সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। মুসা বিন নুসাইর ছিলেন উমাইয়া খেলাফতের একজন সেনাপতি ও বীর যোদ্ধা এবং উত্তর আফ্রিকার গভর্নর ছিলেন।

মুহাম্মদ বিন কাসিম রহ. সিন্ধু বিজয়ী বীর সেনানী। সতের বছর বয়সে যিনি মুসলিম বাহিনীর হয়ে বীরত্বের সাথে অভিযান পরিচালনা করেন এবং বিজয় ছিনিয়ে আনেন। তারিক বিন জিয়াদ রহ. ছিলেন স্পেন জয়ী বীর নওজোয়ান। আন্দালুস (পুরো স্পেন) জয় করেছিলেন বীর বিক্রমে। আব্দুর রহমান আল-গাফিকী রহ. ফ্রান্সে মুসলিম সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, স্পেন থেকে ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিমের বিস্তীর্ণ এলাকা (tours) পর্যন্ত জয় করেছিলেন।

কুতায়বাহ বিন মুসলিম রহ. উমাইয়া খেলাফতের জেনারেল ছিলেন। মধ্য এশিয়া ও চীন পর্যন্ত এলাকা বিজয় করেন। সুলতান মাহমুদ গজনভি রহ.গজনভি ভারত অভিযানের অন্যতম বীর। আল্প আরসালান রহ. সেলযুক সাম্রাজ্যের সুলতান। তিনি ১০৭১ সালে মানযিকার্টের যুদ্ধে বাইজেন্টাইন খ্রিস্টান ক্রুসেডারদের পরাজিত করে আনাতোলিয়া থেকে বিতাড়িত করেন। ইউসুফ ইবনে তাসফিন রহ. উত্তর আফ্রিকা ও স্পেনে ইসলামী সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। স্পেনে খ্রিস্টান রাজা আলফানসোর হাতে আন্দালুসের রাজধানী টলেডোর পতনের পর স্পেনে মুসলিম সাম্রাজ্য বিলুপ্তির শিকার হতে শুরু করে তখন ইউসুফ বিন তাশফিন উত্তর আফ্রিকা থেকে স্পেনে আসেন ও ঐতিহাসিক যাল্লাকার যুদ্ধে (১০৮৬) সম্মিলিত খ্রিস্টান সেনাবাহিনী নেতৃত্বাধীন আলফানসোকে পরাজিত করেন। ফলে পরবর্তী ৪০০ বছর মুসলিম সাম্রাজ্য স্পেনে টিকে থাকে।

সালাউদ্দীন আইয়ুবী রহ. শুধু একটি নাম নয়; বরং একটি ইতিহাস। তিনি ছিলেন মিসর ও সিরিয়ার প্রথম সুলতান। ১০৯৯ সালে খ্রিস্টান ক্রুসেডাররা বায়তুল মোকাদ্দাস অবরোধ করে মুসলিমদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়। ১১৮৭ সালে বীর সেনাপতি সালাউদ্দীন আইয়ুবী হাত্তিনের যুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে পুনরায় তা দখলমুক্ত করেন। মুহাম্মদ ঘুরি রহ. তরাইনের যুদ্ধে পৃথ্বীরাজ চৌহান কে পরাজিত করে দিল্লি বিজয় করেন এবং তখন থেকে দিল্লিতে ইসলামী সালতানাতের শুভ সূচনা হয়। নূরুদ্দীন জঙ্গি রহ. জেনগি রাজবংশের সন্তান। তিনি ছিলেন খ্রীষ্টান ক্রুসেডার ও ফাতেমী শিয়াদের অন্যতম আতঙ্ক। এছাড়াও রাসূল সা. এর পবিত্র মৃতদেহ চুরির ইহুদি চক্রান্ত থেকে রওজা শরীফকে নিরাপদ করেন।

কুতুবুদ্দিন আইবেক রহ. জন্মসূত্রে তুর্কী কিন্তু ভারতে বেড়ে ওঠা এক বীর। যিনি ছিলেন সুলতান মুহাম্মাদ ঘুরির একান্ত প্রিয়ভাজন। তাঁর মাধ্যমেই ভারতে ওসমানী সালতানাতের বিস্তার ও স্থায়িত্ব লাভ হয়। সাইফউদ্দিন কুতুজ রহ. এর হাত ধরে মামলুক সালতানাত (কায়রো) এর শুরু। তিনি ঐতিহাসিক আইন জালুতের যুদ্ধের মোঙ্গল সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেন। সুলতান রকুনুদ্দিন বাইবার্স রহ. ছিলেন সাইফুদ্দিন কুতুজ এর সেনাপতি এবং পরবর্তীতে মামলুক সালতানাতের (কায়রো) শাসক। ক্রুসেডাররা যখন গোটা আরব গিলে নিতে চক্রান্ত করছিলো, তখন উত্থান হয় বাইবার্স ঝড়ের। খ্রিস্টানদের পরাজিত করে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ক্রুসেডারদের বিতাড়িত করেন। ঐতিহাসিক আইন জালুত যুদ্ধের মধ্য দিয়ে চেঙ্গিস খানের গঠিত (সব যুদ্ধে অপারেজয়) মঙ্গোল বাহিনীকে পরাজিত করেন।

নিজামুল মুলক রহ.। যিনি আল্প আরসালান ও মালিক শাহ এই দুই সেলজুক শাসকের অধীনে ৩০ বছর মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। সেলজুক সাম্রাজ্যকে উন্নত ও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে অবদান রাখায় তাকে নিজামুল মুলক বলে ডাকা হতো। তিনি মানুষকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে ধারণা দিতে রচনা করেন ‘সিয়াসাত নামা’। নিজামুল মুলকের নিজামিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠার ফসল আজকের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা। ইতিহাসে এত বেশি অবদান রাখা সত্তে¡ও বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় তাকে স্মরণ করা হয় না এবং অনেক ডিগ্রিধারী লোক জানে না নিজামুলক কে? মুহাম্মদ আল ফাতেহ রহ.। বয়স যখন ১১ তখন তার পিতা দ্বিতীয় মুরাদ উসমানি সালাতানাতের গুরুভার তাঁর ওপর অর্পণ করেন। কিন্তু তিনি তা বাবার হাতে হস্তান্তর করে দেন এবং বাবার ইন্তেকালের পর নিয়মতান্ত্রিকভাবে আবার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভবিষ্যতবাণী করে গিয়েছিলেন, কনস্ট্যান্টিপল মুসলিমরা একদিন জয় করবে এবং বলেছিলেন কতই না অপূর্ব সেই বিজয়ী সেনাপতি ও তার সেনাবাহিনী। এই ভবিষ্যতবাণী বাস্তবে রূপ দিতে অনেকেই চেষ্টা করে গেছেন। কিন্তু সফল হতে পারেননি। তবে আল ফাতিহ ১৪৫৩ সালে ২১ বছরের সদ্য কৈশোর পেরোনো যুবক টানা ৫৩ দিন যুদ্ধের মাধ্যমে অধিকার করে নেন বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্ট্যান্টিপল। এর মাধ্যমে পতন হয় খ্রিস্টান রোমান সাম্রাজ্যের এবং মুসলিমদের হতে চলে আসে ইউরোপের শ্রেষ্ঠতম নগরী তাঁর শাসনামলে উসমানীয় সাম্রাজ্য কনস্টান্টিনোপল, এশিয়া মাইনর, সার্বিয়া, আলবেনিয়া, ইতালি ও ক্রিমিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।

এভাবেই একসময় পুরো পৃথিবীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মুসলিম শাসকরা। বিস্তৃত করে গেছেন মুসলিম সাম্রাজ্যের। যাদের বড় একটি অংশই ছিলো যুবক। তাদের মেধা, রণকৌশল ছিলো বিস্মিত করার মতো। যারা তাঁদের জীবন, যৌবন, অর্থ, সম্পদ, শিক্ষ, কৌশল, বুদ্ধিমত্তা সবকিছু দিয়ে মুসলিমদের গৌরব ইতিহাস লিখে গেছেন।

লেখক:
লেখক ও সংগঠক

তথ্যসূত্র :
ইসলামী খেলাফত ও মুসলিম শাসনের ইতিহাস/আসিএবি
মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো/আবুল হাসান আলী নদভী
উইকিপিডিয়া/ইন্টারনেট